জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আসনে (রংপুর-৩) প্রার্থী হওয়ার জন্য ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন জাপার বেশ কয়েকজন নেতা। মাঠে নেমেছেন এরশাদের পরিবারের কয়েকজন সদস্যও। মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কথাও শোনা যাচ্ছে কারও কারও মুখ থেকে। এ নিয়ে জাতীয় পার্টির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দ্বিধাবিভক্তি রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা।
তাদের ভাষ্য, রংপুর-৩ আসনটির সঙ্গে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের আবেগ জড়িত ছিল। এ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের সিদ্ধান্তে ভুল হলে দলে বড় ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। এ সংকট দলকে আরেক দফা ভাঙনের মুখে ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা কোনো কোনো নেতার।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করা শর্তে জাতীয় পার্টির দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য আমাদের সময়কে জানান, কেউ স্বীকার করুক আর না করুক- জাতীয় পার্টি মানেই হচ্ছে রংপুর। সারা দেশের জাপার সমর্থক থাকলেও রংপুরেই হচ্ছে জাপার মূল অস্তিত্ব। সেখানে ব্যক্তিস্বার্থ বাস্তবায়নে যদি মনোনয়ন দেওয়া হয়, তা হলে জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশই প্রতিবাদ করবে।
জাপার বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান বেগম রওশন এরশাদের বাসায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের আনাগোনা চলছে। কেউ কেউ মনোনয়ন নিশ্চিত বলে নিজ এলাকায় প্রচার চালাচ্ছেন। আবার কেউ এলাকায় না গিয়ে ঢাকায় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে বলে বেড়াচ্ছেন যে তার মনোনয়ন নিশ্চিত। ফলে এ আসনের উপনির্বাচন ঘিরে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে বলে জানান জাপার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
জাপার নীতিনির্ধারণীয় পর্যায়ের এক নেতা বলেন, রংপুর-৩ হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নিজের আসন। এখানে তার পরিবারের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না। উচিতও হবে না। আরেক নেতা বলেন, এরশাদের পরিবারের মধ্যে তার ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদ, এরশাদের আমেরিকা প্রবাসী ছোট ভাই ড. হুসেইন মুর্শেদ, ভাতিজা আসিফ শাহরিয়ার, ভাগ্নি মেহেজেবুন্নেছা রহমান টুম্পা ও ভাতিজা (মামাতো ভাইয়ের ছেলে) মেজর (অব) খালেদ আখতারকে মনোনয়ন দিলে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। তাদের সঙ্গে এলাকার মানুষের বোঝাপড়া নেই। ফলে পরিবার থেকে মনোনয়ন দিলে এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও আসতে পারে।
অপরদিকে এরশাদ পরিবারের বাইরে রংপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফখর-উজ-জামান জাহাঙ্গীর, রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির ও জেলা জাপা নেতা আবদুর রাজ্জাকও প্রার্থী হওয়ার জন্য প্রচার চালাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার চেয়ারম্যান জিএম কাদের আমাদের আমাদের সময়কে বলেন, প্রার্থী মনোনয়ন একক সিদ্ধান্তে হবে না। পার্টির মনোনয়ন বোর্ড আছে। তাদের সবার সর্বসম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আশা করছি, এ সিদ্ধান্তে সবাই সন্তুষ্ট হবেন।
এদিকে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় জাপার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, রংপুর-৩ শূন্য হওয়ায় ওই আসনে জাতীয় প্রার্থী মনোনয়নের জন্য ৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের আহ্বায়ক ও পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সদস্য সচিব করে এ পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। পার্লামেন্টারি বোর্ডের অন্য সদস্যরা হলেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য- কাজী ফিরোজ রশীদ, গোলাম কিবরিয়া টিপু, অ্যাড. শেখ সিরাজুল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী ও লে.জে. (অব) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। এতে বলা হয় আজ থেকে রংপুর-৩ শূন্য আসনের জন্য জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে ফরম বিতরণ করা হবে।